দেশের বেশিরভাগ জেলার ওপর দিয়ে কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এত যশোরের সর্ববৃহৎ মৎস্য পোনা উৎপাদন ও বিক্রয় কেন্দ্রের মৎস্য হ্যাচারি ও ঘেরগুলোতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে মাছের পোনা উৎপাদন। এ সেক্টর থেকে প্রায় সব ধরনের দেশীয় সাদা মাছের চারা ও রেনু পোনা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
মৎস্য পোনা চাষি ও হ্যাচারি মালিকদের দাবি তীব্র তাপপ্রবাহে পানিতে মাছের ডিম ও ব্রুট (মা মাছ) নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাছের পোনা উৎপাদন হচ্ছে না। তাদের দাবি, চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকে বৃহৎ এ মৎস্য সেক্টরে কোনো বেচাকেনা নেই।
যশোর হ্যাচারি মালিক সমিতির তথ্য মতে, যশোরে মাছের পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি রয়েছে ৪০টি। এর মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ২৫টি। এদিকে রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় যশোরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩০ শতাংশ।
চাচড়া মৎস্য পল্লির পোনা চাষি ও হ্যাচারি মালিকরা জানান, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পানির সংকট অন্যদিকে পুকুরের পানি রোদে গরম হয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হারিয়ে ফেলছে। ফলে পানিতে ডিম বা ব্রুট (মা মাছ) ছাড়লে তা থেকে পোনা মাছ উৎপাদন হচ্ছে না। সব ডিম পানিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে লাখ লাখ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন পোনা চাষি ও হ্যাচারি মালিকরা।
পোনা চাষি ও ব্যবসায়ী শাহাজাহান হোসেন বলেন, আমার দুইটি পুকুরে সাদা মাছের পোনা উৎপাদন করে থাকি। গত একমাস ধরে পোনা উৎপাদন করতে পারছি না। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহে পানি গরম হয়ে মাছের ডিম ও ব্রুট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অতি তাপপ্রবাহে অনেক জলাশয় শুকিয়ে গেছে। ফলে পাইকাররা মাছ সংরক্ষণ বা বিক্রি করার স্থান পাচ্ছেন না। এজন্য পাইকাররাও এ চাচড়াঁ মৎস্য হ্যাচারিতে পোনা কিনতে আসছে না।
মৎস্য ব্যবসায়ী ও রেনু পোনা চাষি আবির হাসান শিহাব বলেন, পুকুরে পোনা মাছ উৎপাদনের জন্য ডিম বা ব্রুট ফেললেই মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে কোনো টিউবওয়েল বা পাম্পে পানি উঠছে না, ফলে পোনা চাষের পানি পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে।
পোনা চাষি ও ব্যবসায়ী জি এম আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে পুকুরের গভীরে গ্যাস হয়ে পানি গরম হয়ে যাচ্ছে, ফলে পোনা মাছ মারা যাচ্ছে। আজকেও আমার দুই কেজি পরিমাণ বাটা মাছের চারা গরমে স্ট্রোক করে পানিতেই মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, হ্যাচারি সংলগ্ন আমার তিনটি পুকুর আছে। গত এক দেড় মাস ধরে কোনো ব্যবসা নেই। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা লোকসান গুনছি। কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।
যশোর হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পোনা চাষিরা চরম বিপদে আছি। আমার নিজেরও অনেক ব্রুট মারা গেছে। তাপপ্রবাহে পানির তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে পোনা মাছ মারা যাচ্ছে। প্রায় সকল ব্যবসায়ী ও মৎস্য চাষিরা এ তীব্র তাপপ্রবাহে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যশোর জেলা মৎস্য অফিসার সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, বর্তমানে যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এমতাবস্থায় মৎস্য পোনা চাষিদের ঘেরে প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে। পানির স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে যাতে থাকে সে চেষ্টা করতে হবে। তাহলে পোনা উৎপাদনে সমস্যা হবে না। মৎস্য চাষিরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব।