Hathazari Sangbad
হাটহাজারীবৃহস্পতিবার , ২০ জুলাই ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুই বিবস্ত্র তরুণীর ভিডিও ভাইরাল, বিক্ষোভে উত্তাল মণিপুর

অনলাইন ডেস্ক
জুলাই ২০, ২০২৩ ৬:৪৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দুই তরুণীকে নিপীড়নের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন মণিপুরের হাজার হাজার মানুষ

উপজাতি দুই তরুণীকে জনসমক্ষে নগ্ন করে ঘোরানোর পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। বৃহস্পতিবার রাজ্যের চুরাচাঁদপুর এলাকায় হাজার হাজার মানুষ অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

ওই দুই তরুণীকে নিপীড়নের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। গত ৪ মে ভিডিওটি প্রথম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর আগের দিন স্থানীয় হিন্দু মেইতি ও খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মাঝে জাতিগত দাঙ্গা দেখা দেয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, দুই মণিপুরি তরুণীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানোর পর একটি মাঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে একদল জনতা তাদের ওপর সংঘবদ্ধ যৌন নিপীড়ন চালায়। এই ভিডিওটি নতুন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় লোকজনের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মণিপুর পুলিশ ২৬ সেকেন্ডের ফুটেজ দেখে প্রাথমিক সন্দেহভাজনদের একজনকে আটক করেছে। থৌবাল জেলা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, আটককৃত ব্যক্তিকেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভিডিওটি প্রকাশের পর মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, জঘন্য এই ঘটনার সাথে জড়িত সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের চিন্তাভাবনাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার তদন্ত এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের একাধিক তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক টুইটে তিনি বলেছেন, ওই দুই নারীর জন্য আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে; যারা অত্যন্ত অসম্মান ও অমানবিক কাজের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কোনও ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

ওই অঞ্চলেন চলমান জাতিগত সংঘাতের মাঝে দুই মাস আগের এই ঘটনা বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে আসার পর এর নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই তরুণীর শ্লীলতাহানির ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

গত মে মাসে মণিপুরের মেইতি এবং কুকি সম্প্রদায়ের মাঝে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩০ জনের প্রাণহানি এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ৩২ লাখ বাসিন্দার এই রাজ্যে বিশৃঙ্খলার শুরু হয়েছিল মে মাসের প্রথম দিকে।

রাজ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কুকি গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে সেখানে দফায় দফায় আন্দোলন হয়। মণিপুর রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মেইতি সম্প্রদায়ের। তারপরও ওই রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ১০ শতাংশের মালিকানা এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের হাতে রয়েছে। ভারতের এই রাজ্যে তফসিলি উপজাতিদের বাইরে পাহাড়ী এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার অনুমতি নেই।

সম্প্রতি ভারতের হাই কোর্ট মেইতি সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। হাই কোর্টের এই নির্দেশের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মেইতি সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে জমি কেনার অনুমতি পাবেন।

সূত্র: এনডিটিভি, বিবিসি।