Hathazari Sangbad
হাটহাজারীসোমবার , ১৫ এপ্রিল ২০২৪

৫৪ কোটি টাকায় ছাড়া পেল এমভি আবদুল্লাহ

অনলাইন ডেস্ক
এপ্রিল ১৫, ২০২৪ ৪:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আইনি বাধ্যবাধকতার কারণ দেখিয়ে মুক্তিপণের বিষয়ে কিছু খোলাসা না করলেও সোমালিয়ান জলদস্যুরা জানাল এমভি আবদুল্লাহ’কে ছাড়তে কী পরিমাণ মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স দুুই জলদস্যুর বরাতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহকে ছাড়াতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। যদিও মুক্তিপণের বিষয়ে মুখ খুলেনি মালিকপক্ষ।

তবে হেলিকপ্টারে ছুঁড়ে মারা ব্যাগ কুড়িয়ে নেওয়ার একটি ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের ওই প্রতিবেদনে আবদিরশিদ ইউসুফ নামে এক দস্যুর বরাতে লিখেছে, দুই রাত আগেই মুক্তিপণের ডলার বুঝে পেয়েছে জলদস্যুরা। এরপর তারা যাচাই করে দেখেছে সেগুলো আসল নাকি নকল। কয়েকটি দল ডলারগুলো ভাগ করে নিয়ে এমভি আবদুল্লাহ ত্যাগ করে।

এ বিষয়ে জানতে সোমালিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা সাড়া দেয়নি বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

নাবিকের মুক্তিতে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডের তার সরকারি বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করেছি, দীর্ঘদিন কথাবার্তা চলেছে। এখানে মুক্তিপণের কোনো বিষয় নেই। আমাদের আলাপ-আলোচনা এবং বিভিন্ন ধরনের চাপ আছে এখানে। সেই চাপগুলো এখানে কাজে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করেছি, দীর্ঘদিন কথাবার্তা চলেছে। এখানে মুক্তিপণের কোনো বিষয় নেই। আমাদের আলাপ-আলোচনা এবং বিভিন্ন ধরনের চাপ আছে এখানে। সেই চাপগুলো এখানে কাজে দিয়েছে।’

‘কারণ আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে এটা (জাহাজ) তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। কাজেই জলদস্যুরাই একদম সর্বশক্তিমান, ব্যাপারটা তা নয়। এতদিন যাবত আমরা যে সময়টা নিয়েছি, ইউরোপিয়ান নেভাল ফোর্স থেকে শুরু করে অনান্য যারা আছে, এরা (জলদস্যু) ভীষণ চাপে ছিল।’—বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সোমালিয়ান পুলিশেরও বিরাট চাপ ছিল। তারা চায় জলদস্যুদের হাত থেকে এ সমুদ্র পথকে নিরাপদ করতে। এজন্য আমেরিকার সাপোর্টও তারা নিচ্ছে। তারা সে ধরনের একটা পরিকল্পনা করছে, যাতে ভবিষ্যতে এ রুট নিরাপদ থাকে।’

রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ২৩ জন নাবিক সারিবদ্ধভাবে জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল যেন প্লেনের পাইলট দেখতে পারেন সবাই অক্ষত আর নিরাপদ আছে। মুক্তিপণ নিয়ে একটি উড়োজাহাজ বাংলাদেশ সময় শনিবার বিকেলে জিম্মি জাহাজের ওপর চক্কর দেয়। এ সময় ওই উড়োজাহাজ থেকে ডলারভর্তি ব্যাগ সমুদ্রে ছুড়ে ফেলা হয়। আর ছোট স্পিডবোটে করে তা কুড়িয়ে নিচ্ছে জলদস্যুরা।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মূলত ভিডিওটি করেছে সোমালিয়ার ইন্টারপ্রেটার। যিনি এই মুক্তিপণ নেগোসিয়েশন টিমের লিডার ছিলেন। তিনিই ভিডিওটা করে শিপিং কোম্পানিকে পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান বলেন, ‘দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দেখলাম, মুক্তিপণ ছাড়াই রাষ্ট্রীয় আর আন্তর্জাতিক চাপ দিয়ে জাহাজ মুক্ত করেছেন, এমন দাবি করছেন। তবে কি ডলারের ব্যাগগুলোতে জলদস্যুদের জন্য যাকাতের শাড়ি আর লুঙ্গি ছিল?’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো সরকারি নাটক ছিল না। সোমালিয়ার জলদস্যুদের উপরে অন্তত বাংলাদেশের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কেএসআরএম ম্যানেজমেন্ট এবার দ্রুত মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজ আর নাবিকদের মুক্ত করেছেন। তবে অন্যান্য জলদস্যুরা উৎসাহিত হতে পারে এই আশংকায় উনারা মুক্তিপণের অঙ্ক প্রকাশ করতে অনাগ্রহী। ওনাদের এই সিদ্ধান্তে আমিও একমত।’

‘জাহান মণি’ উদ্ধারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে এমভি আবদুল্লাহকে মুক্ত করলো কবির গ্রুপ। নানাভাবে দেনদরবার ও দরকষাকষি শেষে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতায় ৩১ দিন পর মুক্তি মিলেছে তাদের। তবে মুক্তিপণ হিসেবে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে তা এখনো প্রকাশ্যে আনেনি কর্তৃপক্ষ।

কেএসআরএমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, ‘১৩ বছর আগে আমাদের আরেকটি জাহাজ জাহান মণি জিম্মি হয়েছিল। তখন আমাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। সে জন্য জাহাজটি উদ্ধারে সময় বেশি লেগেছিল। এমভি আব্দুল্লাহ জিম্মি হওয়ার পর, দ্রুত উদ্ধারে প্রপার ওয়েতে কাজ করেছি। জাহাজটি জিম্মি হওয়ার পর থেকে জাহাজের ভিসেটের মাধ্যমে জাহাজটির সব তথ্য তদারকি করেছি।’

সোমালিয়ার উপকূলে জাহাজটি যাওয়ার পরপরই জলদস্যুদের একজন কমান্ডার যোগাযোগ করেছে উল্লেখ করে মেহেরুল করিম বলেন, ‘একজন কমান্ডার যিনি ইংরেজি বলতে পারেন, তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর থেকে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাহাজের নাবিকেরা সুস্থ আছেন কি-না তা নিশ্চিত করা। আমরা যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল শিপিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তাই প্রতিটি রুল আমাদের মেনে চলতে হয়। এমভি আব্দুল্লাহর বেলায়ও বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রতিদিন জুমে কথা বলে আপডেটগুলো জানাতে হতো।’

প্রতিদিন নাবিকেরা কেমন আছে, তার একটি ভিডিও নিতেন জানিয়ে মেহেরুল করিম বলেন, ‘আমরা জানতাম নাবিকেরা প্রতিদিন পরিবারের সঙ্গে কথা বলত। তারপরও আমরা নাবিকেরা কেমন আছে, সেটির ভিডিও নিতাম জলদস্যুদের কাছ থেকে। সর্বশেষ দুই দিন আগে আমাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। তারপর সবকিছু আইন মোতাবেক করে, জিম্মিদের ছাড়াতে সক্ষম হই।’

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালিয়ান দস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটেছিলো। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। এরপর শুরু হয় দর-কষাকষি।

২৩ নাবিকসহ জাহাজটিকে ছেড়েছে জলদস্যুরা। মুক্তি পাওয়ার পর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়।

এর আগে, একই গ্রুপের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর সোমালি জলদস্যুরা হাইজ্যাক করেছিলো। ওই সময় জাহাজটির ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। জাহাজটিতে প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন নিকেলের আকরিক ছিল। আরব সাগর দিয়ে যাত্রার সময় ভারতের লাক্ষাদ্বীপ থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে তারা হাইজ্যাকের শিকার হয়। তখনও জলদস্যুদের সাথে জাহাজের মালিকপক্ষের নানাভাবে দেনদরবার ও দরকষাকষি শেষে সমঝোতায় ১০০ দিন পর মুক্তি মিলেছিল তাদের।