চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ— এমন একটি খবর চাউর হয়েছে গেল দুদিন ধরে। এর মধ্যেই কেন্দ্র থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা না আসলেও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। গণমাধ্যমে কথা বলেছেন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলামও।
জানা গেছে, শনিবার সকালে একজন মন্ত্রীর বাসায় নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, ‘আওয়ামী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তৈয়বসহ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নৌকার সনি, তরমুজের আবু তৈয়ব দুজনকেই সরে যেতে হবে নির্বাচন থেকে। বাজাতে হবে সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারীর একতারা!
তবে কেন্দ্র থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা না আসায় বিষয়টি এখনো মুখে মুখে। যার কারণে বিষয়টি গুঞ্জন নাকি সত্যি-তা নিয়ে রয়ে যাচ্ছে রহস্য। যদিও নেতাকর্মীদের অনেকে বলছেন, দায়িত্বশীল নেতারা ভুলবার্তা দিতে পারেন না। কেন্দ্র থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে সাইফুদ্দিনকে সমর্থন দিতে নির্দেশনা এসেছে। লিখিত কোনো নির্দেশনা না এলেও সরাসরি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে ফোন করে নাকি বিষয়টি জানিয়েছেন।
এদিকে শনিবার সকালে একজন মন্ত্রীর বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা, ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরি, নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তৈয়ব ও সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারীকে শনিবার দুপুরে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি।
তবে এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে সুপ্রিম পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা এসেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক মোবাইল ফোনে ওই নির্দেশনা দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা এটা প্রতিপালন করবেন বলে আমার বিশ্বাস। তবে শেষ সময়ে এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। কেন্দ্র থেকে এই নির্দেশনার আগে আমি নিজেও ওদের সভায় (বিক্ষোভ সমাবেশে) বক্তব্য রেখেছি। কোন কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- সেটা কেন্দ্রের বিষয়। আমাদের প্রিয়নেত্রী যেটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাই চূড়ান্ত।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পেয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড আমাকে বলেছে, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা যেন বিএসপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আমাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন।’
জানা গেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করেন ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী। এরপর থেকেই চাউর হয়েছে সুপ্রিম পার্টিকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরদিন এটিকে ‘গুজব’ দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ। ওই মিছিলে অংশ নেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা, নৌকার প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনিসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। এর পরই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা এবং ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরিকে ফোন করেন একজন মন্ত্রী। তাঁর ফোন থেকে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। ফোনে তাঁদের সুপ্রিম পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। দুজনই শেষ সময়ে এসে কীভাবে অবস্থান পরিবর্তন করবেন, ভোটার ও নেতাকর্মীদের কী জবাব দেবেন-এমন নানা বিষয় দলের সাধারণ সম্পাদককে জানান। তবে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা শোনার পর তাঁরা দলীয় নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করবেন বলে জানিয়ে দেন।
সূত্র: সিভয়েস ২৪