হাটহাজারীতে শ্রমিক সংকট ও বাড়তি মজুরিতেও পাওয়া যাচ্ছে না ধান কাটার শ্রমিক। এ অবস্থায় কৃষকরা কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে বেশির ভাগ জমির ধান কাটছে।
মঙ্গলবার (২ মে) উপজেলার গুমানমর্দন ইউনিয়নের খাটাখালি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ, গ্রামের পর গ্রাম এক কথায় পুরো উপজেলা জুড়ে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে শত শত কৃষকের স্বপ্ন। প্রতিটি শীষে যেন কৃষকের জীবনের স্বপ্ন ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বোরো ধানের সমারোহ। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে মরতে বসেছেন হাটহাজারীর বোরো চাষিরা।
তীব্র খরায় পুড়ছে মাঠের পাকা ও আধাপাকা ধান। অনেকের জমির ধান আবার ঝরে পড়ছে। এ অবস্থায় মিলছে না ধান কাটার শ্রমিকও। এ অবস্থায় হাটহাজারীর বেশ কয়েকটি মাঠে ভাড়ায় হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন স্থানীয় কৃষকরা। এতে সময় এবং খরচ দুটিই সাশ্রয় হচ্ছে তাদের।
কম্বাইন হারভেষ্টারের মাধ্যমে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাভর্তি হচ্ছে খুব সহজেই। কৃষি শ্রমিক ও সময় দুইটোই কম লাগায় বেশ সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা। অল্প সময়ে ঘরে ধান তুলতে ধান কাটা অটোমেটিক মেশিনের দিকেই ঝুঁকেছেন এলাকার কৃষকেরা। তাই কৃষকের কাছে এই মেশিন অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফলে চাহিদাও বাড়ছে এই আধুনিক মেশিনের।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কম্বাইন হারভেষ্টারের মাধ্যমে ধান কাটা হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। এতে বেশিরভাগ জমিতে ধান কেটে রেখে দেয়। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি হতাশায় থাকেন। এ সব যান্ত্রিক মেশিন তৈরি হওয়ায় কম খরচে কৃষকরা ফলন ভালো পাচ্ছেন।
উপজেলার গুমানমর্দন খাটাখালি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ২০ কানি জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। শ্রমিক দিয়ে জমির ধান কাটতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটতে খরচ পড়ছে ৬০ হাজার টাকা। মেশিন দিয়ে ধান কাটায় কম সময়ে বেশি ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। আর ২-১ দিন কাটলেই শেষ হয়ে যাবে ধান কাটা।
জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এখন গুমানমর্দনসহ হাটহাজারীতে প্রতিটি গ্রামের কৃষকই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে ঝুঁকছেন। আমি এবছর ১০ কানি জমিতে ধান চাষ করেছি। এসব ধান শ্রমিক দিয়ে কাটলে ৬০ হাজার টাকা লাগতো। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দি একসঙ্গে করতে খরচ পড়ছে ৩০ হাজার টাকা।
এনাম নামে এক কৃষক জানান, আগে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাতাম। এতে আমাদের প্রতি ১ কানি ধান কাটতে ১০জন শ্রমিক প্রয়োজন হতো। এখন এই হারভেস্টার মেশিন পাওয়াতে আমাদের বেশ উপকার হয়েছে এবং অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
হারভেস্টার উদ্যোক্তা শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রায়হান চৌধুরী বলেন, ট্রু ফারমার্স এগ্রো ৫০ শতাংশ প্রণোদনায় হারভেস্টার কিনেছি। এটা দিয়ে ধান কাটায় দ্রুত ধান কাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ১০০ শ্রমিক সারা দিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যতটুকু জমির ধান কাটতে পারে, একটা হারভেস্টার সহজেই সেই জমি ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দি করতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আল মামুন শিকদার জানান, হাটহাজারী উপজেলার কৃষি খাতে শ্রমিক সংকট মিটিয়ে নিজেদের স্বচ্ছলতার মাধ্যম হিসেবে উন্নত প্রযুক্তির কম্বাইন হারভেস্টারের দিকে ঝুঁকছেন মাঝারি ও বড় পর্যায়ের কৃষকরা। হারভেস্টার যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানো গেলে কৃষকের ফসলের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনি শ্রমিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ প্রয়োজনীয়তার দিকটি মাথায় রেখে কৃষকদের মাঝে যন্ত্রটির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ায় এব্যাপারে ভর্তুকি সহায়তাও দিচ্ছে সরকার।