Hathazari Sangbad
হাটহাজারীবুধবার , ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রাউজানে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা: গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম

অনলাইন ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩ ৭:০৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাউজানে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এতে করে গ্রেপ্তার আতঙ্কে উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। সবাই যে যার-যার মতো করে গা-ঢাকা দিয়েছে। বেশিরভাগ বাড়িতে শুধু নারী ও শিশু রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকায় বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকায় লোকজনের চলাচল একেবারে সীমিত হয়ে গেছে। মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের উপস্থিতিও কমে গেছে। জমিতে চাষবাসের কাজেও লোকজন কম বের হয়েছেন। যদিও এখনো সবশেষ ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় এলাকার কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, পুলিশ গ্রেপ্তার না করলে মামলার খবর শুনে এলাকাবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এরকম এক কিশোরের খণ্ডিত মরদেহ দেখে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। একারণে আসামিদের দেখে কেউ স্থির থাকতে পারেনি। তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করে ফেলেছে। যদিও এলাকাবাসী এটা উচিত করেনি।

জানা গেছে, শিবলী সাদিক (১৯) নামে এক কলেজছাত্রকে অপহরণের পর হত্যাকে কেন্দ্র এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রকে হত্যার ঘটনার পর দায়ের হওয়া মামলায় ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- সুইচিংমং মারমা (২৪), অংথুইমং মারমা (২৫) উমংচিং মারমা (২৬)।

তাদের মধ্যে পরদিন (১১ সেপ্টেম্বর) উমংচিং মারমাকে নিয়ে ভুক্তভোগীর মরদেহ উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। এদিন কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী দলুছড়ি পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহৃত যুবক হৃদয়ের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে পঞ্চপাড়া গ্রামে কয়েকশ মানুষ জড়ো হয়ে পুলিশের গাড়ি আটকে দেয়। এসময় উত্তেজিত জনতা গাড়ি থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুটি মামলার বাদীই পুলিশ। এরমধ্যে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর এবং আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করা হয়। এছাড়া আসামিকে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। দুটি মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আসামিদের শনাক্ত করে তারপর গ্রেপ্তার করা হবে।

জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট রাতে মুরগির খামার থেকে শিবলী সাদিককে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার দুদিন পর অপহরণকারীরা হৃদয়ের পরিবারের কাছে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের সদস্যরা ২ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। কয়েক দিন পর অপহৃত শিবলীর বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়ায় গিয়ে দুজনের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু তারা শিবলীকে মুক্তি দেয়নি। এরপর ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে রাউজান থানায় মামলা দায়ের করেন।

মুরগির খামারের ঝগড়ার জেরে খুন হন ভুক্তভোগী শিবলী-

ভুক্তভোগী শিবলী সাদিক কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি এলাকার একটি মুরগির খামার দেখাশোনা করতেন। আসামিরা সেখানে চাকরি করতেন। সম্প্রতি মুরগির খামারে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামিদের ঝগড়া হয়। যদিও সেটি মিটমাট হয়ে গিয়েছিল। তবে মনে মনে ক্ষোভ রেখে দিয়েছিল অভিযুক্তরা। একারণে শিবলীকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সুইচিংমং মারমা ও অংথুইমং মারমা চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সংশ্লিষ্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তারা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ এবং কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বর্ণনা দেন।

আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে আসামিরা জানিয়েছেন, আগের ঝগড়ার জেরে উচিত শিক্ষা দিয়ে শিবলীকে গত ২৮ আগস্ট অপহরণ করে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। এরপর তাকে খামারের পেছনের প্রায় আট কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একদিন পর অর্থাৎ ২৯ আগস্ট তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর ভুক্তভোগীর হাত-পা, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা করে পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়। একারণে শিবলীর পরিবার ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলেও তাকে ফেরত দিতে পারেনি অভিযুক্তরা।

রাউজান থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, গ্রেপ্তার দুজন জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।