Hathazari Sangbad
হাটহাজারীবৃহস্পতিবার , ১০ আগস্ট ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফসলসহ চট্টগ্রামের ২৭ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে

অনলাইন ডেস্ক
আগস্ট ১০, ২০২৩ ৪:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নগরের ৩ এলাকা ও উপজেলাসহ ৯ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে তৈরি করা আমনের বীজতলার মধ্যে ৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমির বীজতলা এখনও পানিতে ডুবে আছে। বিভিন্ন উপজেলায় ৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া শরৎকালীন সবজিসহ চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ২৬ হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমির ফসল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং ও পতেঙ্গা এলাকার ৫ হেক্টর জমিতে লাগানো আউশ ধান, ২০ হেক্টর জমিতে লাগানো আমনের চারা ও ১৪০ হেক্টর জমিতে লাগানো সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ১৫ উপজেলায় ৩৩২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বীজতলা ৬ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে। এসব উপজেলায় কিছুদিন আগে ৫১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয় আমনের চারা। এরমধ্যে ১৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে নতুন লাগানো চারার ক্ষতি হয়েছে।

আউশ ধান কাটার কথা চলতি মাসের শেষে-

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ভারি বর্ষণ ও বন্যায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ ও সাতকানিয়া এলাকায় আবাদ করা আউশ ধানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এসব ফসল কাটার কথা ছিল। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় ২০ হেক্টর জায়গায় আবাদ হওয়া আউশ ধানের মধ্যে ৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে আছে। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে মিরসরাই উপজেলায় ১শ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ২৯৭ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৬৫ হেক্টর, হাটহাজারীতে ১৫ হেক্টর, রাংগুনিয়ায় ৪০ হেক্টর, পটিয়ায় ২৯০ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ২৩৫ হেক্টর, আনোয়ারায় ৬৬০ হেক্টর, চন্দনাইশে ২ হাজার ২শ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ১৭০ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ৪৯০ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১ হাজার ৫শ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ৫শ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আউশ ধান পানিতে ডুবে আছে।

সবে লাগানো হয়েছিল আমনের চারা-

এদিকে গতমাসের শেষের দিকে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে ৫১ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছিল আমনের চারা। ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বর্তমানে ১৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে লাগানো আমনের চারা পানিতে ডুবে গেছে। এরমধ্যে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাংগুনীয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী ও পটিয়া এলাকায় বেশি প্রভাব পড়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাস পর এসব ফসল কাটার কথা। এরমধ্যে নগরের পাঁচলাইশ এলাকায় ১০ হেক্টর, ডবলমুরিং এলাকার ১০ হেক্টর, উপজেলার মধ্যে মিরসরাইয়ে ১৫০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর, হাটহাজারীতে ১ হাজার ৮শ হেক্টর, রাউজানে ২ হাজার ৬০৫ হেক্টর, রাংগুনিয়ায় ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৬৭৫ হেক্টর, পটিয়ায় ২৫৫ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১৬৪ হেক্টর, আনোয়ারায় ১৩ হেক্টর, চন্দনাইশে ১৫ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ৩ হাজার ৭৫৩, সাতকানিয়ায় ১শ হেক্টর, বাঁশখালীতে ৬০ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ২শ হেক্টর জমিতে লাগানো আমনের চারা পানিতে ডুবে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা জানান, এক মাস আগে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলা মিলে ৯ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে লাগানো বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাঁশখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া এলাকায়। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ এলাকার ১৬ হেক্টর, মিরসরাইয়ে ৬৩ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ১০ হেক্টর, হাটহাজারীতে ১৯০ হেক্টর, রাউজানে ২৪৩ হেক্টর, রাংগুনিয়ায় ২শ, বোয়ালখালীতে ১৮০ হেক্টর, পটিয়ায় ৪শ, কর্নফুলীতে ৫৫ হেক্টর, আনোয়ারায় ৪শ হেক্টর, চন্দনাইশে ৪৪০ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ৩৫৯ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ৩৯০ হেক্টর, বাঁশখালীতে ৬৮০ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ২শ হেক্টর জমির উপর তৈরি করা আমনের বীজতলা প্রবল বষ্টিতে প্রভাবিত হয়েছে।

আবাদ করা সবজির পুরোটাই পানির নিচে-

জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় ৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজি যেমন: বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, শসা, ক্ষিরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুলসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। নগরের পাঁচলাইশে ১০২ হেক্টর, ডবলমুরিংয়ে ৩৮ হেক্টর জমিতে লাগানো শরৎকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি মিরসরাইয়ে ১৫০ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ৪১৫ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩১৫ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৩০ হেক্টর, রাউজানে ২৫৭ হেক্টর, রাংগুনিয়ায় ৬৪৪ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৬৫ হেক্টর, পটিয়ায় ২৩২ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১৫৭ হেক্টর, আনোয়ারায় ১৪০ হেক্টর, চন্দনাইশে ১ হাজার ২৪৫ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ২৫০ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ২২২ হেক্টর, বাঁশখালীতে ৩৫০ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ৪৫৫ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজি লাগিয়েছিলেন কৃষকরা। বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে সবজির শতভাগ ক্ষতি হয়েছে।

ধান-সবজি সবই শেষ চকরিয়ায়-

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৫৮৫ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা, ৭ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে আমন ধান, ১ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান, ৩শ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৫১২ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজির আবাদ করা হয়ছিল। প্রবল বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় চকরিয়ায় আবাদ করা ধান ও সবজির পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি উখিয়ায় অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা, ১১০ হেক্টর জমিতে লাগানো আমন ধান, ২০ হেক্টর জমিতে লাগানো আউশ ধানের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ২৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা শরৎকালীন সবজির মধ্যে ২৮ হেক্টর জমির সবজি পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া টেকনাফ ও কুতুবদিয়া অঞ্চলে খুব একটা ক্ষতি না হলেও মহেশখালী অঞ্চলে অতি বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। অঞ্চলটিতে ৫৫ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, ৪৫০ হেক্টর জমির আমন ধান, ১০ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ৬০ হেক্টর জমিতে লাগানো সবজির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-
অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, লোহাগাড়া, রাউজান, রাংগুনিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় উৎপাদিত আউশ ধান ও সম্প্রতি লাগানো আমনের চারা পানিতে ডুবে গেছে। পাশাপাশি সবজির আবাদ পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আশা করছি, বীজতলা থেকে পানি সরে যাওয়ার পর সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা করলে আমনের আবাদ থেকে ভালো ফসল পাওয়া যাবে।’