Hathazari Sangbad
হাটহাজারীবুধবার , ১২ এপ্রিল ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পাসপোর্ট ও এনআইডির ছোট ভুলের বড় খেসারত

অনলাইন ডেস্ক
এপ্রিল ১২, ২০২৩ ৯:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কলেজ পড়ুয়া মেয়ের পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম বাবুল। মেয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, শিক্ষাগত সনদ, পাসপোর্ট ও পিতার এনআইডিতে ‘করিম’ শব্দ নিয়ে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
শুধু রেজাউল করিম বাবুল নন, শত শত মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টে ছোট ছোট ‘শব্দের’ সংশোধন নিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা।
রেজাউল করিম বলেন, মেয়ের পাসপোর্টে আছে সাইফুন্নেসা করিম। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও শিক্ষাগত সনদে রয়েছে সাইফুন্নেসা। আর আমার নামে (পিতার নাম) রয়েছে রেজাউল করিম বাবুল। এখন মেয়ের পাসপার্ট নবায়ন করতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে। আমার ডাকনাম ‘বাবুল’ সংশোধন করার জন্য কখনো উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও নির্বাচন অফিসে বারবার যেতে হচ্ছে। ছেলের পাসপোর্ট নবায়ন হয়ে গেলেও ভুল সংশোধন করতে না পারায় মেয়ের পাসপোর্টের জন্য আবেদনই করতে পারেননি তিনি। নগরীর মোহরা এলাকার মোহাম্মদ হাসানও নিজের ও স্ত্রীর পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। পুরোনো পাসপোর্টে মোহাম্মদ লিখা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে আছে সংক্ষিপ্ত রূপ মো. হিসেবে। একইভাবে তার স্ত্রীর নামে মোছাম্মৎ জেসমিন আকতারের স্থলে এনআইডিতে মোছা লিখা হয়েছে। স্ত্রীর ইংরেজি নামে পাসপোর্টে আছে ঔঊঝগওঘ অকঞঊজ. কিন্তু এনআইডিতে আছে ঔধংসবহ অশঃবৎ. ভোটার নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, শিক্ষাগত সনদপত্র ও টিকা কার্ডের সঙ্গে নাম-ঠিকানার ছোট ভুলের কারণে বড় মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এসব ভুল সংশোধন করতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে অনেক সময় দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়ে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা। ভুয়া বা জালিয়াতির চক্রের খপ্পড়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
শিক্ষাগত সনদের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট তৈরি এখন অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। জাতীয় তথ্য ভা-ারে পরিণত করা হচ্ছে। কিন্তু পৃথক পৃথক সংস্থার অধীনে হওয়ায় ছোটখাটো ভুলগুলো তথ্যভা-ারে যুক্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে তা সংশোধনের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জনগণের। এতে হয়রানি ও ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে জনগণ। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের জন্য নির্ভুল তথ্যভা-ারের দাবি রাখে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান পূর্বকোণকে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখতে চাচ্ছে কমিশন। আর সরকারেরও সিদ্ধান্ত আছে এটা সরকারের কাজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে। এরমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতার কথা বলেছেন জনগণ। এটা সমাধান করা দরকার। সেবা কীভাবে হয়রানিমুক্ত ও সহজীকরণ করা যায় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।’
 
ডিসি আরও বলেন, ‘আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করছি। নির্ভুলভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট প্রণয়নের বিষয়ে আমরা কাজ করবো।’
এনআইডি : জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও ভুল সংশোধন করতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা মানুষের। নগরী ও জেলার নির্বাচন কার্যালয়গুলোয় প্রতিদিন এ নিয়ে ভিড় লেগে রয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. জাহাঙ্গীর হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে এখন কোনো ভোগান্তি নেই। ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে আবেদন করা যায়। সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সংশোধন করে দিচ্ছি। তবে বয়স বাড়ানো-কমানো বা নাম সংশোধনের নামে বড় পরিবর্তন আমরা করতে পারি না। কারণ এরমধ্যে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বয়স কমানোর প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।’
জাতীয় পরিচয়পত্র করতে এলাকাভেদে ১৮-২০ ধরনের তথ্য ও কাগজপত্র জমা দিতে হয় নাগরিকদের। মূলত রোহিঙ্গা নাগরিকেরা জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার পর কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট লাকী নামে এক রোহিঙ্গা নারী নির্বাচন কার্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে গেলে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। ওই রোহিঙ্গা নারী টাকা দিয়ে ভোটার হয়েছেন বলে স্বীকার করেছিলেন। জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তভুক্ত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২৬ অক্টোবর নগরীর হালিশহর আবাসিক এলাকার বি-ব্লকে হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলাকালীন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ১০ জন। পুলিশের ভাষ্য ছিল, একটি চক্রের মাধ্যমে ঢাকা থেকে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন করা হয়।
পাসপোর্ট : পাসপোর্ট তৈরি ও পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে নামের ছোটখাটো ভুলের জন্য বড় মাশুল দিতে হচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীদের। তবে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসরণের দিকনির্দেশনা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া ছোটখাটো ভুলের জন্য সার্ভার এখন আর আটকে থাকে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা সংশোধন করে দেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাঈদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখন ছোটখাটো ভুলের জন্য সফটওয়্যারের সিস্টেম আটকে থাকে না। অধিদপ্তর থেকে সেই বিষয়ে সমাধানের নীতিগত নির্দেশনা রয়েছে। তবে বয়স ও নামের বড় ধরনের সংশোধনের সুযোগ নেই। সেই বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে।’
তথ্য সহায়তা : চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে এখন তথ্য সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে পাসপোর্ট প্রণয়নে নানা ধরনের সেবা প্রদান করা হয়। বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, শিক্ষাগত সনদ ও জন্মনিবন্ধন অনুসরণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে এখন থেকে আর কোনো ধরনের ভুল না হয়।