Hathazari Sangbad
হাটহাজারীবুধবার , ১৬ আগস্ট ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চট্টগ্রামে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ১ লাখ ১৫ হাজার কৃষক

অনলাইন ডেস্ক
আগস্ট ১৬, ২০২৩ ৭:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া শরৎকালীন সবজিসহ ২৬ হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমির ফসল। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন চট্টগ্রামের প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৪০ জন কৃষক। পাশাপাশি আউশ ধান, রোপা আমন ধান, আমনের বীজতলা ও শরৎকালীন সবজি মিলে চট্টগ্রামের কৃষকদের প্রায় ১৮৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং ও পতেঙ্গায় ২১৪ হেক্টর জমিতে লাগানো হয় আউশ ধান, রোপা আমন ধান ও শরৎকালীন সবজি। এরমধ্যে ১১৩ হেক্টর জমির ফসলের পুরোটাই ক্ষতি হয়েছে। ফলে নগরের ৫৯০ জন কৃষকের প্রায় ৫ কোটি ৯০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। অপরদিকে বন্যার কবলে পড়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ি, লোহাগাড়া, সাতকানিয়াসহ ১৮টি উপজেলায় ৭ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমির ফসলের পুরোটাই ক্ষতি হয়েছে। ফলে এসব উপজেলার প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৫০ জন কৃষকের প্রায় ১৭৯ কোটি ৫ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।

আউশ ধানে ক্ষতি ১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা—

বন্যার প্রভাবে চট্টগ্রামের ১৮টি উপজেলার ১১ হাজার ৬০৩ জন কৃষকের আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি মাসের শেষে এসব ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে এসব ফসল নষ্ট হয়ে কৃষকদের প্রায় ১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এতে বন্যায় কবলিত হয়ে মিরসরাই উপজেলার ৬৫ জন কৃষকের প্রায় ৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা, সীতাকুণ্ডে ২৭০ জন কৃষকের প্রায় ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ফটিকছড়িতে ৬৫ জন কৃষকের ৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা, হাটহাজারীতে ৬০ জন কৃষকের প্রায় ৯ লাখ টাকা, রাঙ্গুনিয়ায় ৩৫ জন কৃষকের ৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, বোয়ালখালীর ১০৫ জন কৃষকের ২২ লাখ টাকা, পটিয়ার ৮৫০ জন কৃষকের ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা, কর্ণফুলীর ১৫০ জন কৃষকের ১৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, আনোয়ারার ৯৫০ জন কৃষকের ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা, চন্দনাইশের ৬ হাজার ৭২০ জন কৃষকের ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, লোহাগাড়ার ৫৮০ জন কৃষকের ১ কোটি ২১ লাখ টাকা, সাতকানিয়ার ১ হাজার ২১৪ জন কৃষকের ১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাঁশখালীর ৪শ’ কৃষকের ৫৪ লাখ টাকা ও সন্দ্বীপের ৪৪ কৃষকের ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার আউশ ধান ক্ষতি হয়েছে।

৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি রোপা আমনে—

গতমাসের শেষের দিকে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় লাগানো হয়েছিল আমনের চারা। আগামী দুই থেকে তিন মাস পর এসব ফসল কাটার কথা। তবে বন্যার কারণে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী ও পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার ১৫ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে লাগানো আমনের চারা পানিতে ডুবে গেছে। ফলে এসব এলাকার ২৯ হাজার ২৪৭ জন কৃষকের ৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এরমধ্যে নগরের পাঁচলাইশ এলাকার ৯৫ জন কৃষকের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে মিরসরাই উপজেলার ৭০ জন কৃষকের প্রায় ৮২ লাখ ২ হাজার টাকা, ফটিকছড়িতে ৬ হাজার ১৭৫ জন কৃষকের ৮১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, হাটহাজারীতে ৪ হাজার ৫শ’ কৃষকের ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, রাউজানে ২ হাজার ৫ জন কৃষকের ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, রাঙ্গুনিয়ায় ৩ হাজার ৬৮০ জন কৃষকের ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা, বোয়ালখালীতে ১ হাজার ১০ জন কৃষকের ৯০ লাখ টাকা, পটিয়ায় ৫২০ জন কৃষকের ৭৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, কর্ণফুলীতে ২২০ জন কৃষকের ২৮ লাখ ৮ হাজার টাকা, আনোয়ারায় ৬০ জন কৃষকের ১৩ লাখ ১১ হাজার টাকা, চন্দনাইশে ১০৫ জন কৃষকের ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা, লোহাগাড়ায় ৪ হাজার ৩২৫ জন কৃষকের ১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, সাতকানিয়ায় ৫ হাজার ৩২০ জন কৃষকের ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, বাঁশখালীতে ১ হাজার ৫০ জন কৃষকের ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ও সন্দ্বীপে ১১২ জন কৃষকের প্রায় ৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকার রোপা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে।

আমনের বীজতলায় ক্ষতি ১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা—

বন্যার কারণে আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে চট্টগ্রামের ৪২ হাজার ১৯০ জন কৃষকের ১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। শুধুমাত্র নগরের মধ্যে পাঁচলাইশ এলাকার ১২৫ জন কৃষকের আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এতে তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অপরদিকে মিরসরাইয়ে ৪৫ জন কৃষকের প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, সীতাকুণ্ডে ৩৮৫ জন কৃষকের প্রায় ২ লাখ ২ হাজার টাকা, হাটহাজারীতে ২ হাজার ৮৩০ জন কৃষকের ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা, রাউজানের ৭৫০ জন কৃষকের ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, রাঙ্গুনিয়ার ৩৪০ জন কৃষকের প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বোয়ালখালীর ৪৮০ জন কৃষকের প্রায় ২০ লাখ টাকা, পটিয়ার ৩ হাজার ৫৫০ জন কৃষকের প্রায় ১ কোটি ১ লাখ টাকা, কর্ণফুলীতে ১ হাজার ৩শ কৃষকের প্রায় ২৫ লাখ টাকা, আনোয়ারায় ৮ হাজার ৪০ জন কৃষকের প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, চন্দনাইশে ২ হাজার ৯৫০ জন কৃষকের প্রায় ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, লোহাগাড়ায় ৩ হাজার কৃষকের প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, সাতকানিয়ায় ৯ হাজার ৪০ জন কৃষকের প্রায় ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, বাঁশখালীর ৯ হাজার ২শ’ জন কৃষকের প্রায় ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও সন্দ্বীপের ১২০ জন কৃষকের ৭ লাখ ২ হাজার টাকার আমনের বীজতলা ক্ষতি হয়েছে।

সবজিতে ক্ষতি ১১২ কোটি টাকা—

জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় ৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজি; যেমন— বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, শসা, ক্ষিরা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ঝিঙ্গা, কাকরোল, করলা, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দুলসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। ফলে চট্টগ্রামের ৩২ হাজার ৪৯৫ জন সবজি চাষীর প্রায় ১১২ কোটি ৩২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এতে নগরের পাঁচলাইশ এলাকার ৩২৫ জন সবজি চাষীর প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও ডবলমুরিং এলাকার ৪৫ জন সবজি চাষীর ৭২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ১৫০ জন সবজি চাষীর প্রায় ৯১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, সীতাকুণ্ডের ২ হাজার ৭৬০ জন চাষীর ৬৯ লাখ টাকা, ফটিকছড়ির ৬ হাজার ১২৫ জন চাষীর ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, হাটহাজারীতে ১৭০ জন চাষীর ৪২ লাখ টাকা, রাউজানে ১ হাজার ২২০ জন চাষীর প্রায় ৫ কোটি ২ লাখ টাকা, রাঙ্গুনিয়ায় ৪৬৫ জন চাষীর ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বোয়ালখালীতে ২৬০ জন কৃষকের প্রায় ৬৫ লাখ টাকা, পটিয়ার ১৫শ’ জন কৃষকের ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা, কর্ণফুলীর ৪৫০ জন কৃষকের প্রায় ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, আনোয়ারার ৪৫০ জন কৃষকের প্রায় ৮০ লাখ টাকা, চন্দনাইশের ৫ হাজার ২৩০ জন কৃষকের প্রায় ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা, লোহাগাড়ার ২ হাজার ১৫০ জন চাষীর ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, সাতকানিয়ার ৪ হাজার ৯৫ জন চাষীর ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, বাঁশখালীর ৬ হাজার ৭৮৫ জন চাষীর প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ও সন্দ্বীপের ৩১৫ জন চাষীর প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার শরৎকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে।

চকরিয়াতেই নষ্ট হয়েছে ৭৩ কোটি টাকার ফসল—

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৫৮৫ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা, ৭ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে আমন ধান, ১ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান, ৩শ’ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৫১২ হেক্টর জমিতে শরৎকালীন সবজির আবাদ করা হয়ছিল। প্রবল বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় চকরিয়ায় আবাদ করা ধান ও সবজির পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে চকরিয়ার ৩০ হাজার ৭২৪ জন কৃষকের ৭৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি উখিয়া অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা, ১১০ হেক্টর জমিতে লাগানো আমন ধান, ২০ হেক্টর জমিতে লাগানো আউশ ধানের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ২৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা শরৎকালীন সবজির মধ্যে ২৮ হেক্টর জমির সবজি পানিতে ডুবে গেছে। সবমিলিয়ে এই অঞ্চলের ৯৯৫ জন কৃষকের প্রায় ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া টেকনাফ ও কুতুবদিয়া অঞ্চলে খুব একটা ক্ষতি না হলেও মহেশখালী অঞ্চলে অতি বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। অঞ্চলটিতে ৫৫ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, ৪৫০ হেক্টর জমির আমন ধান, ১০ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ৬০ হেক্টর জমিতে লাগানো সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে মহেশখালীর ২ হাজার ৮৩০ জন কৃষকের প্রায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ফসল ক্ষতি হয়েছে।