ঘূর্ণিঝড় মোখায় জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় হাসপাতালে ভর্তি প্রসূতি মায়ের সেই নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ‘মোখা’। আজ রবিবার (১৪ মে) ভোরে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই নবজাতকের জন্ম হয়।
গৃহবধূ জয়নাব বেগম রাজাখালীর বামুলাপাড়ার মোহাম্মদ আরাকানের স্ত্রী।
ওই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজন জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু হলে শনিবার রাত ৯টার দিকে আশ্রয়কেন্দ্রে যান জয়নাব বেগম। রাত দেড়টায় শুরু হয় তার প্রসববেদনা। উপকূলীয় ইউনিয়ন রাজাখালীতে ওই সময় কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন গৃহবধূ। কোন উপায় খোঁজে পাচ্ছিলেন না আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজন। এ খবর পৌঁছে দুর্যোগকালীন ডিউটিরত পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দারের কাছে। তিনি সময়ক্ষেপণ না করেই ছুটে যান ওই আশ্রয়কেন্দ্রে। নিজের গাড়িতে তোলে নেন প্রসূতি জয়নাব বেগমকে। নিয়ে যান ১০ কিলোমিটার দূরে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এই হাসপাতালে আজ রবিবার (১৪ মে) ভোর সাড়ে ৪টায় ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন জয়নাব বেগম। খবর শুনেই উৎসুক সবার হাসি ফোটে। স্থানীয় জনগণ ওসির মানবিকতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মুজিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিশেষ যত্ন নেয়া হয় প্রসূতির। ফলে নরমাল ডেলিভারি হয়। সুস্থ আছেন মা ও নবজাতক।
যন্ত্রণার মাঝেও সন্তান পেয়ে হাসি ধরে রেখে জয়নাব বেগম বলেন, ওসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি সৃষ্টিকর্তার উছিলায় এসেছিলেন বলেই ছেলের মুখ দেখতে পেয়েছি, নচেৎ কি হতো জানি না।
জয়নবের স্বামী মোহাম্মদ আরকান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখার নামানুসারে আমার ছেলের ডাকনাম ‘মোখা’ রাখা হয়েছে।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর হায়দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বিপদ সংকেত ঘোষণার পর থেকেই দিনরাত মানুষকে সচেতন করে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে কাজ করছিলাম। ওই সময় রাতে আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনকালে খবর পাই, এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এক গৃহবধূ প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছেন। জানা ছিলো দুর্যোগ চলাকালীন রাত দেড়টায় কোন পরিবহন বা গাড়ি মিলবে না। তাই নিজের গাড়ি নিয়ে প্রসূতি গৃহবধূকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রবিবার ভোর সাড়ে ৪টায় যখন ফজরের আজান দিচ্ছিলো ঠিক তখনই সন্তান জন্ম দেন গৃহবধূ। আমরা ফিরে পাই স্বস্তি।