Hathazari Sangbad
হাটহাজারীবুধবার , ২৬ এপ্রিল ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঈদের খরচ জোগাতে গিয়ে সাগরেই থেমে গেল ৫ কিশোরের জীবন

অনলাইন ডেস্ক
এপ্রিল ২৬, ২০২৩ ৫:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

কারোরই আঠারোর গণ্ডি পার হয়নি। একজনের বয়স ১৩, আর বাকিদের সতের। ঈদের খরচ জোগাতে স্থানীয় জেলে নুরুল কবিরের সঙ্গে ট্রলার নিয়ে সাগরে পাড়ি জমিয়েছিল পাঁচ কিশোর। গত ২৩ এপ্রিল সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ভেসে আসা একটি ট্রলার থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরদেহ পড়েছিল তাদেরও।
 
নিহত পাঁচ কিশোর হলেন— মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৭), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৭), মুসা আলীর ছেলে ওসমাণ গনি (১৭), শাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (১৭) ও মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৩)। নিহত কিশোররা একই গ্রামের বাসিন্দা। মিটাছড়ি নামের ওই পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সবার মাঝে ভয়ের চাপ কাজ করছে। আর নিহত কিশোরদের পরিবার ও স্বজনদের মাঝে চলছে আহাজারি।
নিহতের স্বজনরা জানান, তাদের ছেলেরা কোনভাবেই জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত নন। তারা সাগরে মাছ ধরতে যাবে ওই বিষয়ে পরিবারের কাউকে কিছু জানায়নি। গত ৭ এপ্রিল (শুক্রবার) সেহরি খাওয়ার পর বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি কেউ। পরে লোকমুখে শুনেছে তাদের সাগরে মেরে ফেলা হয়েছে।
 
নিহত ওসমানের মা জোহরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। খুনিরা আমার ছেলে ও মেয়ের জামাই সওকত উল্লাহকেও খুন করেছে একই সঙ্গে। মাত্র দুই মাস আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন আমি ছেলের শোক সইবো নাকি মেয়ের।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘নিখোঁজের পর থেকে তাদের খুঁজে পেতে আমরা সবাই প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরেছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনেনি, সহযোগিতা করেনি।’
 
নিহত কিশোরদের স্বজনদের দাবি— ওই গ্রামের মুহাম্মদ হোসেনের পুত্র নুরুল কবির (৩৫) প্রলোভন দিয়ে তাদের সন্তানদের সাগরে মাছ ধরতে নিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঈদের খরচ যোগাতে তারা সাগরে মাছ ধরতে যায় আর সেখানেই ডাকাতদের কবলে পড়ে এবং ডাকাতরা তাদের মাছ লুট করে সবাইকে হত্যা করেছে। কিন্তু একইসঙ্গে ট্রলার থেকে নুরুল কবিরের মরদেহও উদ্ধার হওয়ায় ঘটনার রহস্য রহস্যই থেকে গেছে।
 
এলাকাবাসী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চকিদার জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, নিহত পাঁচ কিশোরের বিরুদ্ধে এলাকায় কোন অভিযোগ নাই।
 
নিহত কিশোররা অপরাধের সঙ্গেও জড়িত নয় বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সলিম উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ঈদের খরচ পাওয়ার আসায় এই কিশোররা সাগরে মাছ ধরতে যায়। তাদের নিয়ে যায় স্থানীয় নুরুল কবির নামের এক ব্যক্তি।’
 
অপরদিকে থানা সূত্রে জানা গেছে, নিহত পাঁচ কিশোরের বিরুদ্ধে থানায় কোন রেকর্ড নাই। তবে ২০২১ সালে নিহত নুরুল কবিরকে ডাকাতি প্রস্তুতির সময় উপকূলীয় এলাকা থেকে অস্ত্রসহ আটক করেছিল পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতির দু’টি মামলা রয়েছে।