Hathazari Sangbad
হাটহাজারীমঙ্গলবার , ১ নভেম্বর ২০২২

বাংলাদেশ-ভারত টিকে থাকার লড়াই আজ

হাটহাজারী সংবাদ ডেস্ক
নভেম্বর ১, ২০২২ ৬:৩৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভারত অনেক বড় আক্ষেপের নাম। বারবারই তাদের কাছে হেরে হাতছাড়া হয়েছে বড় অর্জন। আজ আবার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চলমান টি২০ বিশ্বকাপের মঞ্চে অ্যাডিলেড ওভালে ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ দুপুর ২টায়। উভয় দলের ক্ষেত্রেই জিতলে সেমিফাইনালে ওঠার আশা খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকবে, হারলে সম্ভাবনা হয়ে যাবে ক্ষীণ। পয়মন্ত ও ঐতিহাসিক ভেন্যু অ্যাডিলেড ওভালে আজ জেতার লক্ষ্যেই নামার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

এখানে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে পরাস্ত করে বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে টাইগাররা প্রথমবার ওঠে কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু এবার হানা দিচ্ছে ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুতে ১ রানে হারের হৃদয়ভাঙ্গা কষ্ট। আবার ২০১৯ সালে দিল্লিতে ভারতকে হারানোর সুখস্মৃতি দিচ্ছে অনুপ্রেরণা। তাই মিশ্র মানসিক পরিস্থিতি নিয়ে নামবে বাংলাদেশ দল ভারমুক্ত হয়েই। কারণ হল্যান্ড-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় এখন উজ্জীবিত টাইগারদের হারানোর কিছু নেই। শক্ত প্রতিপক্ষ, বিরূপ কন্ডিশন, বৈরী প্রকৃতি- এসব কিছুর মোকাবিলা করে আজ জেতার লক্ষ্য সাকিবদের।
অ্যাডিলেডে শীতের সঙ্গে আছে তীব্র হাওয়া। আর রোদ-বৃষ্টির খেলা চলছে অবিরাম। আজ সন্ধ্যায়ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এসব কিছুকেই পরাস্ত করে এবার হোবার্টে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ দল জয় দিয়ে। হোবার্টের মতোই ১০-১২ ডিগ্রি তাপমাত্রা, বাতাস এবং বৃষ্টির সম্ভাবনাকে মাথায় নিয়ে নামতে হবে বাংলাদেশ দলবে। এখন পর্যন্ত অ্যাডিলেডে ১ টি২০ খেলেছে ভারত।

২০১৬ সালে তারা এই ভেন্যুতে খেলে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় তুলে নেয় ৩৭ রানে। এই ভেন্যুতে মাত্র ৫টি আন্তর্জাতিক টি২০ হয়েছে এবং সেই ম্যাচগুলোতে প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় রান ১৮১ রানের ওপরে। আবার নিয়মিত বিগব্যাশ টি২০ আসরের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় এই ভেন্যুতে। সব টি২০ ম্যাচ বিবেচনায় আনলে গড় দলীয় রান ১৭০! এ কারণে নিশ্চিতভাবেই এখানে আগে ব্যাট করতে হলে বড় সংগ্রহ গড়তে হবে।

ভারতের ব্যাটিং লাইনে লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদবরা আছেন। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপকে বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ভারতের বিপক্ষে বরাবরই দুরন্ত ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ বেশ ভাল ফর্মে আছেন সেটাই বড় আশাব্যঞ্জক ব্যাপার। ভারতীয় টপঅর্ডারকে ঠেকানোর জন্য তাসকিন বড় ট্রাম্পকার্ড হতে পারে। এছাড়া চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দারুণ মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন বাঁহাতি মুস্তাফিজুর রহমান। তার দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
আজ ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে বাড়তি আরেকজন বোলার নিয়ে ভাবতে হতে পারে। আগের ৩ ম্যাচেই পঞ্চম বোলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভুগতে হয়েছে। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ ২ ওভার করতে হয়েছে বাঁহাতি স্পিনার সাকিব ও অনিয়মিত অফস্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। এ বিষয়ে অবশ্য সাকিব যা বলেছেন তাতে করে বাড়তি কোনো বোলার না নেওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

কারণ ভারতের বোলিং লাইনে থাকা অর্শদীপ সিং, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি ও হার্দিক পান্ডিয়ার মতো ফর্মে থাকা পেসারদের মোকাবিলায় ব্যাটিং লাইনআপ বড় রাখা জরুরি। তিনি বলেছেন, ‘মোসাদ্দেক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই বছর ৫ উইকেটও পেয়েছে একটা ম্যাচে। ৫ উইকেট পাওয়া টি২০তে খুবই বিরল ঘটনা। তাকে যদি আপনি অনিয়মিত বোলার হিসেবে মনে করেন আমি বলব যে সেটা ভুল।’

সেক্ষেত্রে আজ কার্যকর মিডিয়াম পেসে পারদর্শী সৌম্য সরকারকে ব্যবহার করতে পারেন সাকিব বাড়তি বোলার হিসেবে। আর আগের একাদশটাই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে আজ। যদিও ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ সর্বশেষ দুই ম্যাচে তেমন ভালো করতে পারেননি। সেক্ষেত্রে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম একাদশে ঠাঁই করে নিতে পারেন। ভারতের বিপক্ষে ১১ টি২০ খেলে মাত্র ১ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

সেই জয়টি এসেছে ভারতেরই রাজধানী শহর দিল্লিতে ২০১৯ সালে। ৭ উইকেটে জিতে যাওয়া সেই ম্যাচটি আজ বড় অনুুপ্রেরণার কারণ হতে পারে বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাওয়া দুঃখ ভোলার জন্য আরেকটি বড় আত্মবিশ্বাসের রসদ হতে পারে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে শক্তিধর ইংল্যাান্ডের বিপক্ষে জয়। সেই হারে ইংল্যান্ড কোয়ার্টারে উঠতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু শেষ আটে উঠে ভারতের কাছে উত্তেজনাপূর্ণ ও আলোচিত ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ।

২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির প্রাথমিক পর্বে ও ফাইনালে, ২০১৬ সালের টি২০ এশিয়া কাপ ফাইনালে এবং ২০১৮ সালে ওয়ানডে এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে বড় গৌরব অর্জন থেকে বঞ্চিত হয় টাইগাররা। তবে এতসব কষ্টকে ছাপিয়ে আজ ঘুরেফিরে আসছে সাড়ে ৬ বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুতে পাওয়া হৃদয়ভাঙ্গা কষ্টটা। কারণ সেই ম্যাচটিও ছিল বিশ্বকাপ মঞ্চে এবং তারপর আবার বিশ্বকাপে দুই দলের দেখা হচ্ছে আজ। ব্যাঙ্গালুুরুতে হাতের মুঠোয় আসা ম্যাচে ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এবার সাকিবরা কি পাল্টাতে পারবেন অতীত?
২০০৯ সালের বিশ্বকাপে প্রথম ভারতের মুখোমুখি হয়ে নটিংহ্যামে বাংলাদেশ হেরেছিল ২৫ রানে। অর্থাৎ বিশ্বকাপে এবার নিয়ে তৃতীয় মোকাবিলা দুদলের। বিশ্বকাপে এবং বিশ্বকাপের বাইরে সবখানেই বাংলাদেশের চেয়ে পরিসংখ্যানে যোজন যোজন এগিয়ে ভারতীয় দল। তবু আশার আলো দেখা দিয়েছে দারুণ এক সুযোগ সামনে আসায়। দুই দলই ৩ ম্যাচ করে খেলেছে চলতি আসরে এবং উভয় দল হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।

বাংলাদেশের সেই বিশাল পরাজয় নেট রানরেটে পিছিয়ে দিয়েছে সাকিবদের এবং ভারত শেষ ওভারে গিয়ে পরাজিত হওয়ায় তাদের রানরেট বেশ ভালো। তাই সেমিতে যাওয়ার আশা পাকাপোক্তভাবে টিকিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশকে জিততেই হবে আজ। সাকিব এ নিয়ে বলেছেন, ‘ভারত ফেভারিট দল, তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেভারিট না, বিশ্বকাপ জিততেও আসিনি। আপনি পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন।

আমরা এটা ভালোভাবেই জানি, যদি ভারতকে হারাই সেটা হবে অঘটন। আমরা নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলে সেটাই করতে চাই।’ অর্থাৎ সাকিবের লক্ষ্য জেতা। কিন্তু বাংলাদেশ জিতে গেলে সেটি অঘটন হবে না তা বলছেন ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। তিনি বলেছেন, ‘তারা খুবই ভালো দল। এই ফরম্যাট, এই বিশ্বকাপ আমাদের দেখিয়েছে যে আপনি কোনো দলকেই হালকাভাবে নিতে পারবেন না। আয়ারল্যান্ড-ইংল্যান্ড ম্যাচে যেমন, এমন উদাহরণ কয়েকটা আছে এবারের আসরে।’

রানরেট যেমনই হোক ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট পাওয়া ভারতকেও আজ জেতার জন্যই নামতে হবে। সেজন্য তারা মরিয়া হয়েই নামবে। বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়তো করতে পারবে, কিন্তু ব্যাটিং লাইন? চলতি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের ব্যাটিং ভালো হয়নি, শেষদিকে রান তুলতে পারেনি প্রত্যাশামাফিক এবং বারবারই নেমেছে ধস। ভারতের সেই সমস্যা নেই। তবে ফিটনেস সমস্যার কারণে উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক খেলবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আজ ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে।

তিনিই নিদাহাস ট্রফিতে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে চলতি আসরে বাংলাদেশের দারুণ বোলিং লাইনআপের জন্য আজই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভারতের ব্যাটিং বিভাগের বিপক্ষে। সেই চ্যালেঞ্জ সামলে আজ অবিস্মরণীয় কোনো কীর্তি গড়তে পারবেন সাকিবরা? ফিরে আসবে কি ২০১৫ সালের অ্যাডিলেডে ঘটা স্মৃতি কিংবা ২০১৯ সালে দিল্লিতে পাওয়া অধরা জয়ের দেখা মিলবে?