Hathazari Sangbad
হাটহাজারীরবিবার , ২৮ মে ২০২৩

পূর্ণিমা বা অমাবস্যা জো‍‍`তে পুরাদমে ডিম ছাড়তে পারে হালদার মা-মাছ

অনলাইন ডেস্ক
মে ২৮, ২০২৩ ৭:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় ইতোপূর্বের তিথি গুলোতে পুরাদমে ডিম ছাড়েনি মা-মাছ। তবে কয়েক দফা ঝড়বৃষ্টি হওয়ার কারণে সামান্য কিছু নমুনা ডিম ছেড়েছে।
যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঝড়বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয় এবং একইসাথে পাহাড়ি পানির ঢল নেমে নদীতে স্রোত সৃষ্টি হয় তাহলে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানির ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি হবে। তখনই হালদায় মা-মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ি পানির ঢল নদীতে নামলে এত বেশি স্রোত সৃষ্টি হয় এতে সমুদ্রের নোনাপানি আর হালদা নদীতে প্রবেশ করতে পারবেনা। তাই মা-মাছ ডিম ছাড়তে হলে বজ্রপাত, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রয়োজন, তাহলেই মা-মাছ ডিম ছাড়ায় অনুকূল পরিবেশ পাবে।
 
পরিবেশ অনুকূলে থাকলে আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পূর্ণিমার জোঁ অথবা জুনের মাঝামাঝি সময় ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে সর্বশেষ অমাবস্যার জোঁ‍‍`তে পুরাদমে ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ। এইবার ডিম সংগ্রহের জন্য প্রায় চার শতাধিক সংগ্রহকারী তাদের সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিম সংগ্রহকারী মোহাম্মদ শফি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে চারবার ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে নেমেছি, যতবার নেমেছি ততবার খালি হাতে বাড়ি ফিরেছি। এরমধ্যে কয়েকবার শুধুমাত্র নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। বজ্রপাত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হলে নদীতে পাহাড়ি পানির ঢল নামবে, তখন পানির ঢলে নদীর নোনাপানি সাগরে চলে যাবে আর নদীতে মিঠাপানি থাকবে। আমরা সেই সময়টার অপেক্ষা করছি এখন। আগামী পূর্ণিমা ও অমাবস্যা জো‍‍`তে পুরাদমে ডিম ছাড়বে মা-মাছ।
তবে আমরা সম্পূর্ণ আশা করছি জুনের প্রথম সপ্তাহ ১ থেকে ৬ তারিখের পূর্ণিমার জো‍‍`তে পুরাদমে ডিম ছাড়বে। এছাড়া ডিম সংগ্রহকারীদের সহযোগিতা করার জন্য নদীর তীরে আইডিএফ নামে একটি সংস্থা রয়েছে। কিন্তু তারা সহযোগিতার পরিবর্তে আমাদের উপর জুলুম করছে। আমাদের সঠিক সময় কোয়া দেয়না, তারা গ্রুপ করে শুধুমাত্র তাদের গ্রুপের অনুসারীদের কোয়া বরাদ্দ দেয়। তাছাড়া তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে বলেও জানান তিনি। ঘূর্ণিঝড় মোখা‍‍`র পরে বৃষ্টিপাতের কারণে হালদা নদীর পানিতে লবণাক্ততা কমেছে বলে জানান হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডক্টর মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ২০ মে হালদা নদীর মদুনাঘাট থেকে শুরু করে সাত্তারঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন ডিম ছাড়ার স্থানে (স্পনিং গ্রাউন্ড) পানির নমুনা সংগ্রহ করে সরাসরি হালদা নদীতে বসে পরীক্ষা করে দেখা যায় পূর্ণজোয়ারের সময় হালদা নদীতে গড়ে ০.৫ পিপিটি লবণাক্ততার উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।
 
স্বাদুপানিতে লবণাক্ততার স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ০.৫ পিপিটি বা তার কম। অর্থাৎ হালদার পানির বর্তমান লবণাক্ততা আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি পানির পিএইচ এর গড়মান ৭.৬ আদর্শ মানের (৬.৫ থেকে ৮.৫) মধ্যে রয়েছে। তবে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। হালদায় তখন পানির গড় তাপমাত্রা ছিলো ৩১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের (২২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তুলনায় প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বাড়ায় পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বেড়েছে। তখন চতু্র্থ জোঁ অর্থাৎ অমাবস্যার জোঁ থাকলেও বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নেমে না আসায় হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
 
পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢল নামলে হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্রে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং আগামী জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ ১ থেকে ৬ তারিখ পূর্ণিমার জোঁ অথবা সর্বশেষ ১৫ থেকে ২০ জুনের অমাবস্যার জোঁ‍‍`তে পুরাদমে ডিম ছাড়বে কার্পজাতীয় মা মাছ।