এক বছর আগে মো. জামিনের সঙ্গে বিয়ে হয় গৃহবধূ রাবেয়া বেগমের। বিয়ের পর থেকে তাদের সংসার জীবনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হতো। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বৈঠকও হয়। পরে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয় রাবেয়া। সেখানে আসা-যাওয়ায় মো. জামিন সন্দেহ করায় দুই মাস পর চাকরিটা ছেড়ে দেয়। পরে রাবেয়া তারা বাবার চায়ের দোকানের পাশে রাস্তায় পিঠা বিক্রি করতো। তবে সেটাও পছন্দ করতো না রাবেয়ার স্বামী।
সবশেষ গত ১০ জানুয়ারি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে ফরমে রাবেয়াকে স্বাক্ষর দিতে রাজি না হওয়ায় দুইজনের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। সেই দিনের ক্ষোভে চার দিন পর অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি পরিকল্পনা করে নিজের স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করার। আর এ পরিকল্পনায় রাবেয়ার স্বামী একা নয়; সঙ্গে ছিল রাবেয়ার বোনের স্বামীসহ। ঘটনার দুইদিন পর গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন রাবেয়ার স্বামী মো. জামিন।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) হালিশহর থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
এর আগে, রবিবার (১৫ জানুয়ারি) রাবেয়ার জানাজার নামাজ থেকে তার ছোট বোনের স্বামী মো. মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর সোমবার (১৬ জানুয়ারি) কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানা এলাকায় থেকে রাবেয়ার স্বামী মো. জামিনকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার মোস্তফা কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার শিবলী থানার দামপাড়া সুন্দরবনের মোড় এলাকার মো. শফিকুল ইসলামের ছেলে। অন্যদিকে জামিন কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার দক্ষিণ হাটি এলাকার শাহ আমিনের ছেলে। দুজনই হালিশহর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে পুলিশ জানায়, গত এক বছর আগে আসামি জামিনের সঙ্গে রাবেয়ার বিয়ে হয়। এটি ছিল রাবেয়ার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। সেই ঘরে তার দুই মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় সংসারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় স্বামী জামিনের সঙ্গে প্রায় সময় রাবেয়ার ঝগড়া হতো। ওই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য রাবেয়ার বাবা আসামির নিকট আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে রাবেয়া হালিশহর থানাধীন একটি ছোট গার্মেন্টেসে চাকরি করতো। সেটা নিয়ে রাবেয়ার স্বামী তাকে সন্দেহ করলে পরে দুই মাসের মাথায় সে চাকরি ছেড়ে দেয়। পরে বাবার চায়ের দোকানের পাশে রাস্তায় পিঠা বিক্রি করতো সে। সেটাতে মত ছিল না মো. জামিনের। গত ১০ জানুয়ারি এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য একটি ফরমে রাবেয়াকে স্বাক্ষর দিতে বললে সে অস্বীকৃতি জানায়। এতে আসামি জামিনের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। এর চারদিন পর ১৪ জানুয়ারি দুপুরে কাজ শেষে হালিশহরের পাবলিক স্কুলের মোড়ে জামিন ও রাবেয়ার বোনের স্বামীকে নিয়ে খুনের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন সন্ধ্যায় জামিন একটি ছুরি নিয়ে বাসায় যায়। তার পিছন পিছন রাবেয়ার বোনের স্বামীও গিয়ে রুমে প্রবেশ করে। সেখানে রুমে থাকা রাবেয়ার ১০ বছরের মেয়ে আক্তার জান্নাতকে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলে।
পরে সেই শিশুটি বাসায় থেকে বের হয়ে তার নানা দোকানের যায়। এবং নানাকে জানায় তার বাবা একটি ছুরি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে তাকে বাইরে চলে আসতে বলে। পরে রাবেয়া তার স্বামী এবং বোনের স্বামীর জন্য নাস্তা আনতে রান্না ঘরে প্রবেশ করলে আসামিরা তাকে ঝাপটে ধরে। তৎক্ষণাত স্বামী ছুরি দিয়ে রাবেয়ার গলায় পোঁচ মারে এবং পরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে।
এসময় রাবেয়া চিৎকার করে উঠলে স্বামী জামিনের হাত থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে রাবেয়ার গলায় আরও কয়েকবার পোঁচ দেয় বোনের স্বামী মোস্তফা। তখন দৌঁড়ে বেরিয়ে তার বাবার দোকানের সামনে রাস্তায় পড়ে যায়। এসেময় আসামি জামিন ও তার ভায়রা ভাই মোস্তফা দৌঁড়ে দেয়াল টপকিয়ে খালপাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। খালপাড় দিয়া পালানোর সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি খালে ছুড়ে মারে। পরে রাবেয়াকে উদ্ধার করে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যায় হালিশহরের শিশুপল্লী এলাকায় খুন হন ২৬ বছরের রাবেয়া আক্তার। তার দ্বিতীয় স্বামী ছিল জামিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জামিলকে একমাত্র আসামি করে পরদিনই হালিশহর থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা আব্দুল মালেক। ১০ বছর আগে রাবেয়ার প্রথম বিয়ে হয়। সেই সংসারে জান্নাতুল ফেরদৌস মীম (১০) ও জাহেদা আক্তার মায়া (৩) নামে দুই কন্যাসন্তান রয়েছে তার। পর পর দুই কন্যাসন্তান জন্মের কারণে ওই স্বামী স্বামী তাকে তালাক দেয়। পরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ৯ মাস আগে জামিলকে বিয়ে করেন রাবেয়া।