Hathazari Sangbad
হাটহাজারীমঙ্গলবার , ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মেসি বনাম মদ্রিচ: যে লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব

স্পোর্টস ডেস্ক
ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ ১২:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

দুজনের নামের অদ্যাক্ষরে আছে মিল। মিল জার্সি নম্বরেও। বিশ্বকাপেও দুজনের ভাগ্যটা প্রায় একই। লিওনেল মেসি যদি হন আর্জেন্টিনার প্রাণভ্রমরা, লুকা মদ্রিচও ক্রোয়েশিয়ার জন্য তাই। কাতার বিশ্বকাপ দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ডুয়েল লড়াইয়ে। এ যুদ্ধে যিনি জিতবেন তিনি পৌঁছে যাবেন অমৃতের ভাণ্ডের কাছে। আর যিনি হারবেন? – অমরত্বের সন্ধান পেয়ে গেছেন তিনিও। আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালে এমনই এক ধ্রুপদী লড়াই হবে লিওনেল মেসি ও লুকা মদ্রিচের মধ্যে।
 
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে বলকান পাহাড় ঘেঁষা মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ার খুব বেশি মিল নেই। ফুটবলীয় অর্জনেও ক্রোয়েশিয়া আর্জেন্টিনার ধারেকাছেও নেই। দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা, অন্যদিকে মোটে একবার ফাইনাল খেলেছে যুগোস্লাভিয়া থেকে জন্ম নেওয়া ক্রোয়েশিয়া। তবে একটা মিল অন্তত আছে। আধুনিক ফুটবলের দুই ম্যাজিশিয়ানের বাস দুদেশে। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি থাকলে ক্রোয়েশিয়ারও আছে লুকা মদ্রিচ।
 
মেসির উত্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্রোয়েশিয়ার নাম। একইভাবে মদ্রিচের শুরুটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দেশটার নাম আর্জেন্টিনা। মদ্রিচ বয়সে মেসির চেয়ে দুবছরের বড় হলেও জাতীয় দলে অভিষেকের বেলায় মেসি বছরখানেকের সিনিয়র। তবে দুজনকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছে একটা ম্যাচ। ২০০৬ সালের ১মার্চ বাসেলের সেই ম্যাচে অভিষেক মদ্রিচের। আর মেসির ক্যারিয়ারে সে ম্যাচ স্মরণীয় তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের জন্য। সেদিন অবশ্য জয়ের হাসি হেসেছেন মদ্রিচই। ম্যাচটি ৩-২ ব্যবধানে হেরে যায় আর্জেন্টিনা।
 
দুজনেরই ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ ২০০৬ সালে। এরপর মেসি খেলেছেন আরও চারটি বিশ্বকাপের আসরে। অন্যদিকে ২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে না পারায় মদ্রিচ বিশ্বকাপ খেলেছেন একটা কম। ২০১৪ বিশ্বকাপে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন মেসি। ৪ গোল করে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক জিতেছিলেন সে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল। তবে শেষটা আর মনের মতো হয়নি। ব্রাজিলের ট্র্যাজেডির মারাকানা আর্জেন্টিনা ও মেসির জন্যও সাজিয়ে রেখেছিল ট্র্যাজিক সমাপ্তি। মারিও গোতসের গোলে বিশ্বকাপ জিতেছিল জার্মানি।
 
মেসির সঙ্গে মিল মদ্রিচেরও। রাশিয়া বিশ্বকাপে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফ্রান্সের কাছে ৪-২ গোলে হেরে যায় মদ্রিচের দল। ২ গোল করা মদ্রিচ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে জিতে নেন গোল্ডেন বল।
 
ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনা তাকিয়ে ছিল তাদের নতুন ঈশ্বরের জন্য। যে সবুজ মাঠে ফুটবল নিয়ে ছুটে ফোটাবেন জীবনের ফুল। আকাশি-সাদা জার্সিতে ফেরি করবেন জীবনসুধা, যা শুধু দিতে পারে ফুটবল। যে সুধা পান করতে দরকার সোনালী কাপ। ছিয়াশিতে যা তাদের এনে দিয়েছিলেন ডিয়েগো। মেসি তাদের আনন্দ দিয়েছেন। এই পৃথিবীর বাইরের জাদুকরি ফুটবল খেলে রোমাঞ্চে প্রজাপতি নাচিয়েছেন। ক্লাব ফুটবলে যা কিছু করা সম্ভব সব করে দেখিয়েছেন লা পুলগা। তারপরও থেকে গেছে অপূর্ণতা। বিশ্বকাপ শিরোপা ছাড়া কী এই গল্পের ইতি টানা যায়!
 
মদ্রিচের বিষয়টা অবশ্য আলাদা। ক্রোয়েশিয়ার জন্য বিশ্বকাপ খেলতে পারাটাও কম নয়। প্রায় চার মিলিয়ন মানুষের দেশ ক্রোয়েশিয়া স্বাধীনতাই পেল এই সেদিন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ডেভর সুকার-জোভনমির বোবানরা তৃতীয় হয়ে চমকে দিয়েছিল বিশ্বকে। ব্যাস এ পর্যন্তই। এরপর আর এখনো গ্রুপ পর্ব পেরুতে না পারা দেশটাকে ফুটবলের মানচিত্রে পরাশক্তি ভাবার কিছুই নেই। কিন্তু মদ্রিচ, যার বেড়ে ওঠাটা যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতায়, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। রিফিউজি ক্যাম্পের কঠিন দিনগুলোতে ফুটবল ছিল তার আফিম। ইউরোপের ফুটবলে আগেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে। ক্লাবের হয়ে যা কিছু জেতা যায় সবকিছু জিতেছেন।
 
ক্রোয়েশিয়ার জার্সিতে কোনকিছু জেতার তাড়া ছিল না মদ্রিচের, কিন্তু তার স্বপ্নটা তো আকাশ ছোঁয়ার। ২০১৮ সালে খুব কাছে গিয়েও পারেননি। মেসির মতোই হার্ডলসের শেষ ধাপটা পেরুতে পারেননি।
 
ক্রোয়েশিয়া দলের সবখানে মদ্রিচ। আক্রমনে-রক্ষণে, খেলা তৈরি কী গোল করা – মদ্রিচ এই দলের প্রাণবায়ু। তাকে থামালেই যেন নির্জীব হয়ে যাবে ক্রোয়াটরা। কিন্তু ৩৭ বছরের চিরসবুজ মিডফিল্ডারকে থামাবে কে!
 
কাতার বিশ্বকাপ আরও একবার সুযোগ দিচ্ছে দুই মায়েস্ত্রকে। এটাই হয়ত শেষ সুযোগ। ৩৫ বছরের মেসি কিংবা ৩৭ বছরের মদ্রিচকে আরও একটা বিশ্বকাপ খেলতে দেখা দুরাশাই। সেমিফাইনালে আজ জয় পেলে যে কোনো একজন সুযোগ পাচ্ছেন ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে স্বপ্নের ফাইনাল খেলার। আজ যে জিতছেন, সে থাকছে বিশ্বমঞ্চে অমৃতের সন্ধানে। বিজয়ী বীরের বেশে। হেরে গেলেও থাকবেন। বিশ্বকাপের ট্র্যাজিক হিরো হয়ে অমরত্ব পাবেন।