ঘড়িতে তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। একাধারে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ক্লাস রেখে ক্যাম্পাসের লেক পাড়ে গিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুই শিক্ষার্থী অনন্যা হিয়া (২০) ও তাসফিয়া জাহান রিতু (২০)।
বৃষ্টিতে ভেজা শেষে লেক পাড়ের একটি নারকেল গাছের পাশে জুতা খুলে রেখে পানিতে পা ধুতে নামেন দুই বান্ধবী। দুজনের কেউই সাঁতার জানতেন না। পা ধোয়ার একপর্যায়ে অনন্যা হিয়া পিছলে লেকের পানিতে পড়ে যান। লেকের গভীরতা বেশি হওয়ায় মুহূর্তেই ডুবে যান অনন্যা। এ সময় বান্ধবীকে বাঁচাতে চিৎকার দিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন তাসফিয়া জাহান রিতু। মুহূর্তের মধ্যে তিনিও ডুবে যান। লেকের আশপাশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে দুজনকেই ডুবে যেতে দেখেন। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে আধাঘণ্টা পর লেকের মাঝখান থেকে উদ্ধার করে। তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টরসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় নিহতদের সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিকেলে স্বজনদের কাছে নিহতদের মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত অনন্যা হিয়ার বাড়ি খুলনার বড়বাড়ি এলাকায়। আর তাসফিয়া জাহান রিতুর বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাটের মাসকাটা এলাকায়। দুজনেই ছিলেন কাছের বন্ধু। একসঙ্গে থাকতেন শহরের নবীনবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। দুজনেই ছিলেন মেধাবী। তাদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষক-সহপাঠীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজিব হোসেন বলেন, অন্যন্যা হিয়া ও তাসফিয়া জাহান রিতু খুব ভালো ছাত্রী ছিলেন। ক্লাসে মেধাবীদের মধ্যে তারা দুইজন অন্যতম। খুব মিশুকও ছিলেন তারা। তাদের এই করুণ মৃত্যুতে আমাদের বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষক হিসেবে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী রুমিন রহমান বলেন, হিয়া ও রিতু খুব ভালো মনের মানুষ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে তারা একসঙ্গে থাকতো। একেবারে বোনের মতো। তাই তো আজ ক্লাস থেকেও বৃষ্টি দেখে দুজনে একসঙ্গে ভিজতে বের হয়েছিল। কিন্তু কে জানতো তাদের এমন করুণ মৃত্যু হবে। ওদের আমরা অনেক মিস করবো।
উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আকাশ বলেন, ওদের চিৎকার শুনে এসে দেখি দুজনে ডুবে গেছে। ওদের বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করি। দুজনকে পানি থেকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিকেলে নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহ বুঝিয়ে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহাবুব বলেন, দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছি। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে খেয়ার করা হবে।
গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল বলেন, বিকেলে নিহতদের স্বজন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।