Hathazari Sangbad
হাটহাজারীসোমবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

পিতার লাশ দাফনে ছিলো না মেয়েরা, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিলেন চেয়ারম্যান

অনলাইন ডেস্ক
ডিসেম্বর ২৬, ২০২২ ৭:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে পিতার অবসরের টাকা ভাগ বন্টন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জেরে দুইদিন ধরে বাড়ির উঠানে পড়ে ছিলো মৃত মনির আহমদ (৬৫) নামে পদ্মা অয়েল কোম্পানীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লাশ। মৃত্যুর দুইদিন পর সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল দশটায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মৃত মনির আহমদকে। তবে বাবার লাশ দাফনে ছিলো না নিহতের কোন মেয়ে, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও পরিশোধ করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান।
 
জানা গেছে, মনির আহমদের সংসারে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। ছোট ছেলে মো. আলমগীর সৌদি আরবে থাকায় আসতে পারেনি বাবার জানাজায়। তবে তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়েও লাশ দাফনের সময়ে ছিলেন না বাড়িতে। রাতে তারা তাদের শ্বশুর বাড়িতে চলে গেছেন।
মেয়ে লিপি আকতার বলেন, হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়ি নেয়ার পর থেকে বেবি আকতারসহ আমাদের একটি রুমের মধ্যে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ কারণে আমি বিকেলে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসি। রোববার রাতে স্থানীয় ও চেয়ারম্যানের সহযোগিতার আমার অপর দুইবোনকে উদ্ধার হলে তারাও শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। এছাড়া পিতার দাফনের নির্ধারিত সময় না জানার কারণে দাফন কাজে যেতে পারেননি বলেও জানান তিনি।
 
স্থানীয় বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, সত্যি দুঃখজনক ঘটনা আমার ইউনিয়নের মধ্যে। এ ঘটনায় আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। মনির আহমদের অসুস্থতা কারণে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে তার একাউন্টে যে টাকা আছে সেগুলো সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে। সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সোমবার সকালে লাশ দাফন করা হয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, গত রোববার পিতার অবসরের টাকা বন্টনের জেরে দুইবোনকে আটকে মারধরের বিষয়টি জানানোর পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আমি ইউপি সদস্যকে পাঠাই এবং দুই মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়া লাশ বহনের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ১৭ হাজার ৫০০ টাকা আমি নিজ থেকে দিয়ে দিয়েছি।
 
এবি ব্যাংক চাতরী চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ব্যাংক থেকে নিয়ম মেনে লেনদেন করেছেন প্রয়াত মনির আহমদ। এক্ষেত্রে নিয়মের হেরফের ঘটেনি।
 
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মৃতের স্বজনদের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে সোমবার সকালে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
 
এর আগে, গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়ি এলাকার মনির আহমদ। মারা যাওয়ার পর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে এনে লাশ রেখে দেওয়া হয় বাড়ির পাশের সড়কে। রোববার সকাল থেকে অবসরে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলে।
 
এই ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র ধিক্কার ও নিন্দার ঝড় ওঠে। সামাজিকভাবে বসে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন মনির আহমদের লাশ দাফনের তাগাদা দেন।
 
নিহত মনির আহমদ চাকরি থেকে অবসরে গ্রহণের পর ৫০ লাখ টাকা পেনশন পান। আর সেই টাকা নিয়ে সৃষ্টি হয় বিরোধ। নিহতের স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম (৫৫) ও পুত্র মো. জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, নিহতের মেয়ে বেবি আকতার কাউকে না জানিয়ে থেরাপি দেওয়ার কথা বলে চাতরী চৌমুহনী শাখার এবি ব্যাংকে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে পেলেছেন।